তহবিল ও আয়ের এর উৎস
আল-ফালাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয় এবং এর কার্যক্রম চালানোর জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। তহবিল ও আয়ের উৎসগুলোর মধ্যে প্রধান ভূমিকা পালন করে সাধারণ মুসলমানদের দান, যাকাত, ফিতরা, সদস্যদের চাঁদা এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও ব্যক্তিগত অনুদান। এই উৎসগুলো থেকেই ফাউন্ডেশনটি তার সেবামূলক, শিক্ষামূলক এবং দাওয়াহ কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। চলুন বিস্তারিতভাবে প্রতিটি উৎসের ব্যাখ্যা দেখি।
সদস্যদের মাসিক চাঁদা
আল-ফালাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো এর সদস্যদের মাসিক চাঁদা। ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত প্রত্যেক সদস্যকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মাসিক ভিত্তিতে প্রদান করতে হয়। এই চাঁদার অর্থ সংস্থা পরিচালনা এবং তার নানাবিধ সেবামূলক কার্যক্রমের ব্যয় মেটানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
মাসিক চাঁদার অর্থ ফাউন্ডেশনের নিয়মিত আয়ের উৎস হওয়ায় এটি একটি স্থায়ী তহবিল হিসেবে কাজ করে। ফাউন্ডেশনটি সদস্যদের চাঁদার মাধ্যমে সাধারণ কার্যক্রম, যেমন কর্মচারীদের বেতন, অফিস পরিচালনা ব্যয় এবং অন্যান্য প্রশাসনিক খরচ মেটায়। মাসিক চাঁদার মাধ্যমে প্রাপ্ত এই অর্থের মাধ্যমে ফাউন্ডেশন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে এবং বিভিন্ন সেবামূলক উদ্যোগগুলোকে সচল রাখতে পারে।
যাকাত ও ফিতরা
ইসলামী বিধানে যাকাত ও ফিতরা প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে বিবেচিত হয়, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিত্তবানদের থেকে সংগ্রহ করে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। আল-ফালাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন যাকাত ও ফিতরার তহবিল সংগ্রহ করে এবং তা যথাযথভাবে বিতরণের জন্য নিবেদিত থাকে।
যাকাতের অর্থ ফাউন্ডেশনটি প্রধানত দরিদ্র, অসহায়, বিধবা ও এতিমদের সাহায্য করতে এবং তাদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য ব্যবহার করে। এছাড়া, ফাউন্ডেশনটি স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য বিতরণ, শিক্ষামূলক উপকরণ প্রদান এবং বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে এই অর্থ ব্যবহার করে থাকে। যাকাতের তহবিল পুরোপুরি ইসলামের নির্ধারিত হকদারদের মধ্যে বণ্টন করা হয় এবং এতে কোন প্রকার অন্যায় বা অপব্যবহার হয় না।
ফিতরা, যা রমজান মাসে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের জন্য দেওয়া হয়, সেটিও ফাউন্ডেশন সংগ্রহ করে এবং তা সঠিকভাবে দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত মানুষদের মধ্যে বিতরণ করে। এই অর্থ সাধারণত ঈদের সময় খাদ্য বিতরণের জন্য ব্যবহার করা হয়, যাতে দরিদ্র পরিবারগুলোও ঈদ উদযাপনে অংশ নিতে পারে।
ব্যক্তিগত অনুদান ও দান-সদাকাহ
আল-ফালাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের তহবিল সংগ্রহের একটি বড় উৎস হলো সাধারণ মুসলমানদের দান-সদাকাহ। ব্যক্তি বিশেষের ইচ্ছা অনুযায়ী তারা ফাউন্ডেশনকে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ দান করে থাকেন, যা ফাউন্ডেশন তার বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমে ব্যবহার করে। দান-সদাকাহ একটি ইসলামী প্রথা যেখানে মানুষ তাদের অর্থের একটি অংশ দান করে সমাজের দুর্বল ও অসহায় মানুষদের সাহায্য করার জন্য।
ফাউন্ডেশন নিয়মিতভাবে সাধারণ মুসলমানদের দান সংগ্রহ করে এবং এই অর্থ দিয়ে খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং জরুরি সাহায্য কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শীতবস্ত্র বিতরণ, এবং ইফতার-ঈদ সামগ্রী বিতরণের সময় এই অর্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফাউন্ডেশনটি এই অনুদানকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সাথে ব্যবহার করে, এবং দাতাগণ যেভাবে চায় সেভাবেই সেই অর্থ খরচ করা হয়।
এককালীন অনুদান
বিভিন্ন সময়ে বড় বড় দাতা সংস্থা ও ব্যক্তিরা আল-ফালাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনকে এককালীন অনুদান প্রদান করে থাকেন। এই এককালীন অনুদান ফাউন্ডেশনটির জন্য একটি বড় সাহায্য হিসেবে কাজ করে এবং সাধারণত বড় প্রকল্প বা উদ্যোগের জন্য ব্যবহার করা হয়। যেমন, মসজিদ নির্মাণ, নলকূপ স্থাপন, স্কুল ও মাদ্রাসা নির্মাণ, এবং হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য এই এককালীন অনুদান বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
অনেক ধনী ব্যক্তি বা সংস্থা তাদের অতিরিক্ত সম্পদের একটি অংশ আল্লাহর পথে খরচ করার জন্য ফাউন্ডেশনকে প্রদান করেন। এই অর্থ সংস্থার দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম চালাতে সহায়ক হয় এবং বড় বড় সমাজসেবামূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম করে।
দাতা সংস্থা ও বৃত্তি প্রতিষ্ঠান
আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পর্যায়ে অনেক দাতা সংস্থা ও বৃত্তি প্রতিষ্ঠান আল-ফালাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান করে থাকে। এই সংস্থাগুলো ফাউন্ডেশনকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে, যা ফাউন্ডেশন তার বিভিন্ন শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সেবা কার্যক্রমে ব্যবহার করে। বিশেষ করে শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য বৃত্তি প্রদানকারী সংস্থাগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ ও অন্যান্য শিক্ষামূলক সুবিধা প্রদান করে।
এই দাতা সংস্থাগুলো সাধারণত ফাউন্ডেশনের নির্দিষ্ট প্রকল্পের জন্য অনুদান প্রদান করে থাকে, এবং এই প্রকল্পগুলোর আর্থিক হিসাব স্বচ্ছতার সাথে পরিচালিত হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে ফাউন্ডেশনের সহযোগিতার মাধ্যমে বড় বড় উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।
ওয়াকফ সম্পদ
ওয়াকফ ইসলামের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক পদ্ধতি, যেখানে কোন সম্পদ বা সম্পত্তি আল্লাহর পথে উৎসর্গ করা হয় এবং এর আয় সমাজের কল্যাণে ব্যবহার করা হয়। আল-ফালাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনও ওয়াকফ সম্পদের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে। দাতাগণ তাদের সম্পত্তি, জমি, অথবা অন্যান্য সম্পদ ফাউন্ডেশনের নামে ওয়াকফ করে দেন, এবং এই সম্পদ থেকে প্রাপ্ত আয় ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যবহার করা হয়।
ওয়াকফের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পগুলোর জন্য ব্যবহার করা হয়, যেমন মসজিদ নির্মাণ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, বা হাসপাতাল পরিচালনা। এই অর্থের একটি নির্দিষ্ট অংশ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয় এবং নিয়মিত ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় হিসাব সংরক্ষণ করা হয়।
বিভিন্ন ধর্মীয় অনুদান
আল-ফালাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় অনুদান সংগ্রহ করে থাকে, যেমন কুরবানির জন্য প্রদান করা পশু, ইফতার সামগ্রী, এবং রমজান মাসে বিশেষ অনুদান। এই অনুদানগুলোর মাধ্যমে ফাউন্ডেশন বিশেষভাবে দরিদ্রদের জন্য খাদ্য, পোশাক, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিতরণ করে।
রমজান মাসে যাকাত এবং ফিতরার পাশাপাশি ইফতারের জন্য বিশেষ অনুদান সংগ্রহ করা হয়, এবং এই অর্থ দরিদ্রদের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও কুরবানি সময়ে ফাউন্ডেশনকে প্রদান করা পশু বা অর্থ দরিদ্রদের মধ্যে মাংস বিতরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্ব (CSR)
অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্ব (CSR) প্রোগ্রামের অধীনে আল-ফালাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনকে অনুদান প্রদান করে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লাভের একটি নির্দিষ্ট অংশ সমাজের কল্যাণে ব্যয় করতে চায় এবং তারা ফাউন্ডেশনকে এই অর্থ প্রদান করে। এই অর্থ দরিদ্রদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহৃত হয়।
ফাউন্ডেশন কর্পোরেট দাতাদের সঙ্গে কাজ করে এবং তাদের প্রদান করা অর্থ দিয়ে বড় আকারের সমাজসেবামূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। বিশেষ করে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, হাসপাতাল নির্মাণ, এবং স্বাস্থ্যসেবার জন্য এই ধরনের অনুদান বড় ভূমিকা পালন করে।
আল-ফালাহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের তহবিল ও আয়ের প্রধান উৎসগুলো হলো সদস্যদের মাসিক চাঁদা, যাকাত ও ফিতরা, ব্যক্তিগত দান-সদাকাহ, এককালীন অনুদান গ্রহণ ।